ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের খান ও রানী বাহাদুরের সংসারে নতুন অতিথি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বনগরু দম্পতি খান বাহাদুর ও রানী বাহাদুরের সংসার আলোকিত করে জন্ম নিয়েছে একটি পুরুষ বাচ্চা। বাংলাদেশে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া এই স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি বাচ্চা বদ্ধ পরিবেশে জন্ম নেওয়ায় পার্ক কর্তৃপক্ষ উত্ফুল্ল। দেশে বনগরু সংরক্ষণে এটিকে তারা মাইলফলক বলছে। এ নিয়ে পার্কে বনগরুর সংখ্যা দাঁড়াল তিনটিতে।

বনগরু বা গৌর নামে পরিচিত এই প্রাণীটিকে ভারতীয় বাইসনও বলা হয়। বাংলাদেশে অনেকে এটিকে গয়াল বলে ভুল করলেও গয়াল আলাদা প্রাণী। বনগরুর বৈজ্ঞানিক নাম ‘বস গোরাস’। এর আদিনিবাস বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশে এটি অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন (আইইউসিএন) ১৯৮৬ সালে  বিশ্বজুড়ে এটিকে ‘লাল তালিকার’ (বিপন্ন প্রাণীর তালিকা) অন্তর্ভুক্ত করে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খান বাহাদুর ও রানী বাহাদুরের সংসারে জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি পার্কের দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক হবে। শাবকটিকে লালনপালনে বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। এক সপ্তাহ হয়েছে এটি জন্ম নেয়।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা থেকে পাচারের সময় সেনাবাহিনীর একটি দল বনগরুর পুরুষ প্রজাতির একটি বাচ্চা উদ্ধার করে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে এটি হস্তান্তর করা হয় চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। এখানে অতিথি হিসেবে আসার পর পার্ক কর্তৃপক্ষ এটির নামকরণ করে খান বাহাদুর হিসেবে।

কয়েক বছর একাকী সময় পার করার পর গত বছর খান বাহাদুরের সঙ্গী হিসেবে স্থান করে নেয় স্ত্রী প্রজাতির আরেকটি বনগরু। এটির নাম দেওয়া হয় রানী বাহাদুর হিসেবে। স্ত্রী লিঙ্গের এই বনগরু পার্কে হস্তান্তর করেছিলেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। মূলত তিনি লালনপালন করার জন্য এটি সংগ্রহ করেছিলেন। পরে তিনি এটিকে হস্তান্তর করেন পার্কে।

পার্কের বন্য প্রাণী পরিতোষক মো. দিদারুল আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘পার্কে আসার পর থেকে সঙ্গীবিহীন পুরুষ বনগরু খান বাহাদুরের একেবারেই মনমরা অবস্থায় দিন কাটত। চার বছরের মাথায় যখন বিপরীত লিঙ্গের একজন সঙ্গী পায় তখন থেকেই ফুরফুরে মেজাজি হয়ে ওঠে খান বাহাদুর। এরপর প্রজননে আসে সফলতা।

পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান চকরিয়া নিউজকে জানান, বনগরু দম্পতি খান বাহাদুর ও রানী বাহাদুরের সংসারে জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি সম্পূর্ণ সুস্থ ও সবল রয়েছে। বাচ্চাটিকে নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। বাচ্চাটি মায়ের দুধ খেয়েই বেড়ে উঠছে এবং এভাবেই প্রায় সাত মাস পর্যন্ত মায়ের দুধেই বেড়ে উঠবে বাচ্চাটি।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে এই বন্য প্রাণী সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। বলতে গেলে বনের মধ্যে এখন আর এই বনগরুর তেমন দেখা মেলে না। এই অবস্থায় পার্কের আবদ্ধ পরিবেশে বিলুপ্ত প্রায় বনগরুর প্রজনন একটি মাইলফলক।’

তিনি জানান, পুরুষ প্রজাতির একটি বনগরু প্রায় ২৫ বছর এবং স্ত্রী লিঙ্গের একটি বনগরু বাঁচে প্রায় ২৩ বছর পর্যন্ত। পার্কে থাকা প্রায় ১২ বছর বয়সের পুরুষ প্রজাতির বন গরুটির ওজন বর্তমানে প্রায় এক হাজার কেজি এবং সাড়ে ছয় বছর বয়সী স্ত্রী বনগরুর ওজন প্রায় ৮০০ কেজি।

পাঠকের মতামত: